ভোটের দামামা নেই। এলাকার রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ নিয়ে বেশি বরাদ্দের চাপ নেই এমপিদের কাছ থেকে। কিন্তু তাতে কি স্বস্তিতে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল?
অবশ্যই না। কারণ, বাজেটের সময় সব দেশের অর্থমন্ত্রীদের চাপে থাকতে হয়। আমাদের অর্থমন্ত্রী কেন ব্যতিক্রম হবেন?
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনেক দূরে এখনও। তাই ভোটের জন্য হয়তো কারো মন জয়ের চেষ্টা করতে হবে না অর্থমন্ত্রীকে। কিন্তু করোনা অতিমারি মোকাবিলায় অধিক ব্যয়ের চাপ তার ওপর। কিন্তু আয় বাড়ে নি।
ফলে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই হবে তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
এসব বিবেচনা মাথায় নিয়ে এক বছরেও বেশি সময় ধরে চলা নজিরবিহীন করোনা মহামারির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অনিশ্চিত আগামীর জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যিনি আগের মেয়াদে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে ৩ জুন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট ঘোষণা করবেন মুস্তফা কামাল।
এমন এক সময় বাজেট দিতে যাচ্ছেন তিনি, যখন একদিকে প্রাণঘাতী করোনার অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার কথা ভাবতে হচ্ছে, অন্যদিকে মাথায় রাখতে হচ্ছে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চিন্তা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য কী জাদু আছে তার হাতে? এমন কী দাওয়াই দেবেন তিনি, যার মাধ্যমে কালো মেঘ কেটে নতুন আলো উদ্ভাসিত হবে? করোনামুক্ত হবে জনগণ? বাড়বে কর্মসংস্থান, প্রাণ ফিরে পাবে দেশের অর্থনীতি?
এক বছর আগে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এর অভিঘাতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে ঘুরে দাঁড়ায় অর্থনীতি।
কিন্তু করোনার দ্ধিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ হয়েছে। নতুন করে আড়াই কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে।
অনেকেই চাকরি হারিয়েছে। ছোট কলকারখানাগুলো বন্ধ প্রায়। আয় কমে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তসহ স্বল্প আয়ের অনেকেই কষ্টে আছেন। থমকে আছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।
এমন কঠিন সময়ে বৈরি পরিবেশের মধ্যে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে নতুন বাজেট ঘোষণা করবেন মুস্তফা কামাল। বর্তমান সরকারের আমলে এটি তার তৃতীয় বাজেট।
এর আগে সংসদ ভবনে সরকার প্রধানের কাছ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদেন করে নেবেন অর্থমন্ত্রী। বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে।
দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে রঙিন চশমা দিয়ে দেখলে হবে না। পঞ্চাশ বছরে দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের যে সাফল্য ছিল, করোনায় সেটা অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। ফলে প্রবৃদ্ধির দিকে না থাকিয়ে বাজেটে জীবন-জীবিকায় গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে পরিকল্পনা থাকা জরুরি। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। গরিবের সুরক্ষায় গুরুত দিতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জনগণের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আগে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। জীবন বাঁচলে পরে সবকিছু গুছিয়ে নেয়া যাবে।’
কী থাকছে বাজেটে
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। স্বাস্থ্যে সর্বসাকল্যে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে করোনার টিকা কিনতে ১০ হাজার কোটি টাকার আলাদা থোক বরাদ্দ থাকছে।
নতুন কোনো করারোপ করা হচ্ছে না। বরং আওতা বাড়িয়ে কর আহরণ প্রক্রিয়া আরও সহজ করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। নতুন করে আরও ১২ লাখ বয়স্ক-বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। তবে ভাতার পরিমাণ অপরিবর্তীত থাকছে।
কৃষকের সুরক্ষায় এ খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হচ্ছে। ১০ টাকা দামে দুস্থ জনগণকে চাল খাওয়ানো ও সাশ্রয়ী দামে খোলা বাজারে চাল বিক্রি অব্যাহত রাখা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য, পাটসহ রপ্তানি খাত উজ্জীবিত রাখতে মোট ৪৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। প্রবাসীদের সুরক্ষায় প্রণোদনা আরও ১ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে।
এ ছাড়া কর্মসংস্থান বাড়াতে ব্যবসায়ীদের খুশি করার জন্য কর প্রণোদনাসহ নানা পদক্ষেপের ঘোষণা আসছে।
নিজের তৃতীয় বাজেট প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই এবারের বাজেটের নাম দেয়া হয়েছে ‘জীবন ও জীবিকার বাজেট’।
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে যেমন আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনা হবে, তেমনি দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে টিকা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জীবন বাঁচিয়ে জীবিকার সংস্থান করা হবে।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে বিশাল ঘাটতি থাকবে। সে জন্য নতুন বাজেটে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে বেশি জোর দিতে হবে। ঘাটতি নিয়ে বেশি চিন্তা না করে কর্মসংস্থান বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকতে হবে।’
সাবেক অর্থসচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, বাজেটের লক্ষ্য শুধু সরকারের আয় ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা নয়। এর লক্ষ্য হলো দেশের জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘করোনায় মন্দা অর্থনীতি চাঙা করতে সরকারি ব্যয় আরও বাড়াতে হবে। গরীব মানুষের মাঝে অধিকতর নগদ ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া দরকার। আয়ের ক্ষেত্রে সরকার খুবই দুর্বল। ফলে আয় বাড়াতেই হবে। করোনা মোকাবিলায় একটি পূর্ণাঙ্গ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য কম সুদে ঋণ ও কর ছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাজেটের আকার
করোনা মোকাবিলায় অর্থনীতি চাঙা করতে অধিক ব্যয়ের জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেট দেয়ার কথা বলেছেন দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদরা।
যতদূর সম্ভব সেই পথেই হাঁটছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। প্রস্তাবিত বাজেট জিডিপির প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ।
সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বেশি খরচের লক্ষ্য নিয়ে বিশাল একটি ঘাটতি বাজট (আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি) দিতে যাচ্ছেন মুস্তফা কামাল। এবার ঘাটতি ধরা হচ্ছে জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের (যে অর্থবছর শেষ হতে যাচ্ছে) মূল বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতি ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা ৫ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাজেটের আকার বড় ঘোষণা করা হলেও খরচ তার চেয়ে অনেক কম হয়। কারণ, আমাদের বাস্তবায়নের সক্ষমতা প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি।
এতদিন সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশ ঘাটতি ধরে বাজেট করা হয়েছিল। কিন্তু করোনাকালীণ অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা করতে দুটি বাজেটেই ঘাটতি ৬ শতাংশের বেশি ধরা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, মন্দা পরিস্থিতিতে ‘সম্প্রসারণমূলক’ বাজেট প্রণয়ন করাই হবে সরকারের জন্য উত্তম।
অর্থায়ন
বিশাল ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে বাজেটে অর্থায়ন করা হবে। অভ্যন্তরীণের মধ্যে আবার ব্যাংক ব্যবস্থা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ নেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ঋণ আসবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। ৩২ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। অবশিষ্ট ৫ হাজার ১ কোটি টাকা আসবে অন্যান্য খাত থেকে।
অপরদিকে, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
সবমিলিয়ে দেশি এবং বিদেশি উৎসে থেকে মোট ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে নতুন বাজেটে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে। এসব ঋণের জন্য সরকারকে সুদ দিতে হবে মোট ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
রাজস্ব প্রাপ্তি
নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি বা আয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে মোট ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর বড় অংশই যোগান আসবে এনবিআর থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
অবশিষ্ট টাকা আসবে এনবিআর বহির্ভূত খাত এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে। এর পরিমাণ ৬২ হাজার কোটি টাকা।
প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, নতুন বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। সরকার আশা করছে, চলতি অর্থবছরে এটি হতে পারে ৬ শতাংশের সামাণ্য বেশি, যদিও অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীরা তা গ্রহণ করেন নি।
গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিস রায়হান মনে করেন, প্রবৃদ্ধির দিকে না থাকিয়ে বাজেটে জীবন-জীবিকাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
কর বিষয়ক যে সব সুবিধা থাকতে পারে
এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ,করোনাকালীন সংকট মোকাবিলায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি ব্যবসা-বান্ধব বাজেট উপহার দেবে সরকার।
নতুন কোনো করারোপ না করে করের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। সহজ করা হচ্ছে আইন-কানুন।
বর্তমানে ১৩টি বিষয়ে টিআইএন বাধ্যতামূলক রয়েছে। নতুন বাজেটে আরও তিনটি খাতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম, বাড়ি বানানোর নকশা অনুমোদন ও সমবায় সমিতির নিবন্ধন করা।
কর্মসংস্থান বাড়াতে করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমছে। ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিভিন্ন খাতে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুযোগ আগামী বাজেটেও অব্যাহত রাখার প্রস্তাব থাকতে পারে।
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয় করে ছাড় দেয়া না হলেও ধনীদের ওপর সারচার্জ বাড়ছে। ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদশালীদের সারচার্জ ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আইটি খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা আরও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ২২টি খাত কর অব্যাহতি পাচ্ছে। নতুন করে আরও পাঁচটি খাতে এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে: মোবাইল অ্যাপস ডেভলপমেন্ট, ই-লার্নিং প্লাটফর্ম, ই-বুক পাবলিংকেশন, ক্লাউড সার্ভিস সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এবং ফ্রিল্যান্সিং।
দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় আমদানি বিকল্প নির্ভর শিল্প টেলিভিশন, ফ্রিজের উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর সুবিধা আগামী ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে।
এ ছাড়া কৃষি প্রক্রিয়াজাত ফল, দুগ্ধ উৎপাদন, গৃহস্থালি পণ্য যেমন রাইস কুকার, ওভেন, ব্লেন্ডার শিল্প স্থাপন করলে ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া এসব পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি পাচ্ছে।
ঢাকার বাইরে নতুন করে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল-ক্লিনিক নির্মাণ করলে ১০ বছর কোনো কর দিতে হবে না।
শেয়ার বাজারের জন্য থাকছে সুখবর। এ খাতে কালো টাকা সাদা করার বর্তমান সুযোগ বহাল থাকতে পারে। শেয়ার বাজারে বর্তমানে তালিকাভূক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার ২৫ শতাংশ। এটি কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে।
বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউজের শেয়ার লেনদেনের বিপরীতে উৎসে কর দশমিক ০৫ শতাংশ। এটি কমিয়ে দশমিক ০১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। কমতে পারে ট্রেজারি বন্ডের কর।
মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটে পরিবর্তন আসছে। উৎপাদনমুখী শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের আগাম কর ৪ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ কমছে। এ ছাড়া ভ্যাট ফাঁকির জরিমানা বর্তমানের দ্বি-গুণের পরিবর্তে এক-গুণ করা হচ্ছে এবং বিলম্বের জন্য জরিমানা ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে।
ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ভালো খবর আসছে। তাদের উৎসাহিত করতে বার্ষিক লেনদেনের কর অব্যাহতি সীমা বর্তমানের ৫০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৭০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন: প্রতিবন্ধী, আদিবাসি, তৃতীয় লিঙ্গ, রূপান্তরিত নারী-পুরুষদের কোনো প্রতিষ্ঠান চাকরি দিলে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য করপোরেট কর বর্তমানের চেয়ে ৫ শতাংশ ছাড়ের প্রস্তাব থাকছে নতুন বাজেটে।
আরও পড়ুন:ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিগত তিন অর্থবছর ধরে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিন্ন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ছয় দফায় মোট ৬৮ কোটি ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ মঙ্গলবার ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ৪৭.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকেই ডলার কিনছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ডলার কেনা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে, মাল্টিপল প্রাইস অকশন পদ্ধতিতে। এক ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচ দফায় ডলার কেনে। ১৩ জুলাই ১৮ ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়। এরপর ১৫ জুলাই একই দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে এক কোটি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১০ আগস্ট ১১ ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দাম হঠাৎ করে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া- দুটোই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং বিদেশি দায় পরিশোধও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে ডলারের তীব্র চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ডলার ক্রয় রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে ডলারের চাহিদাও বাড়তে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতায় বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ববিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থার আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনতে একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদলতের উপর চাপ কমবে, সেই সঙ্গে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যবিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংষ্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এ ধরনের সংস্কার দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়। বরং বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন অংশগ্রহণ করেন।
মুক্ত আলোনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডাররা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে ৩ টাকা। নতুন মূল্য অনুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৭০ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ২৭৩ টাকা।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন। নতুন দাম গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়েছে ।
এছাড়া, গাড়িতে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও লিটারে ১৩ পয়সা কমিয়ে ৫৮ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসির ঘোষণায় বলা হয়, বেসরকারি খাতে ভ্যাটসহ প্রতি কেজি এলপিজির নতুন দাম ১০৫ টাকা ৮৭ পয়সা। সেখান থেকে বিভিন্ন ওজনের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হবে।
তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহকৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সৌদি আরামকোর প্রপেন ও বিউটেনের আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে এ দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এই মূল্য নির্ধারণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের বড় বাজারের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ভারত থেকে টমেটো বোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে টমেটো আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন ২৮ টন টমেটো আমদানি করা হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো আমদানি করতে শুল্কসহ খরচ গুণতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ টমেটো আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার হিলি বন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ণ করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড় করণে আমদানিকারককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধের তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এই বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি করা হয়েছিল।
বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজতে থাকায় মঙ্গলবার প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ ডলারের উপরে পৌঁছেছে।
এশিয়ায় প্রাথমিক লেনদেনের সময় মূল্যবান ধাতুটি প্রতি আউন্স ৩,৫০১ দশমিক ৫৯ ডলারে পৌঁছেছে, যা এপ্রিলে এর আগের রেকর্ড ৩,৫০০ দশমিক ১০ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
হংকং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিনিয়োগকারীরা দুর্বল মার্কিন ডলার ও ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদের হার কমানোর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নেওয়ায় সোনার দামের এই দরপতন ঘটেছে।
মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির একটি মূল্য সূচক দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট রেকর্ড সর্বোচ্চ থেকে পিছিয়ে এসেছে। একই সময়ে, ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
শ্রম দিবসের জন্য সোমবার ওয়াল স্ট্রিট বন্ধ ছিল, তখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ডলার মিশ্র লেনদেন করেছে।
বন্ধকী জালিয়াতির অভিযোগে ফেডের গভর্নরকে তিরস্কার করার পর ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুক পদত্যাগ না করলে, তিনি তাকে বরখাস্ত করবেন।
মার্কিন আপিল আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক শুল্ক, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেগুলো অবৈধ বলে রায় দেওয়ার পরও এই রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে।
তবে আদালত আপাতত এই ব্যবস্থাগুলো বহাল রাখার অনুমতি দেওয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করার জন্য সময় পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কমিউনিটি ব্যাংকের স্টার্টআপ রিফাইন্যান্স স্কিমের অধীনে অংশীদারত্বমূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার এবং নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখার উপস্থিতিতে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসএমইএসপিডি বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং কমিউনিটি ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কিমিয়া সাআদত পারস্পরিক অংশীদারত্বমূলক এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে- বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক হাফিয়া তাজরিয়ান, যুগ্ম পরিচালক মো. নুরুল কাওসার সাঈফ এবং কমিউনিটি ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট ব্যাংকিং ও হেড অব বিজনেস (ব্রাঞ্চ) ড. মোঃ আরিফুল ইসলাম, হেড অব এসএমই অ্যান্ড এগ্রিকালচার শরিফ হাসান মামুনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ব্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে দেশের রপ্তানি আয় ১০.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আজ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানি আয় ছিল ৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে, সামগ্রিক এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরও ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের আগস্টে অর্জিত ৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে সামান্য কম।
স্বাভাবিকভাবেই তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্তব্য